মামলা প্রতিহিংসার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল: আপিল বিভাগ
- By Jamini Roy --
- 15 January, 2025
দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস পেয়েছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আপিল বিভাগ উল্লেখ করেন, বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের দেওয়া রায় ছিল প্রতিহিংসামূলক। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, মামলা করার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক হয়রানি। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ অন্যান্য আসামিদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছিল। তবে আজকের রায়ের মাধ্যমে তারা তাদের সম্মান পুনরুদ্ধার করেছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে দুদকের আপিলের পর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
এই মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি ছিলেন দুই বছর এক মাস ১৩ দিন। এর মধ্যে ১৭ বছরের দীর্ঘ শুনানির পর আজ আপিল বিভাগ তার খালাসের রায় দেন।
এ মামলায় শুরু থেকেই বেগম জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য দায়ের করা হয়েছিল। আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন যে, মামলার নথিপত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলেনি।
তারা আরও উল্লেখ করেন, ট্রাস্টের অর্থ সুরক্ষিত ছিল এবং কোনোভাবেই তা আত্মসাতের অভিযোগের সঙ্গে খাপ খায় না। মামলাটির উদ্দেশ্য ছিল খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
এই মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবীরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আপিল বিভাগের মন্তব্য ছিল কঠোর। প্রধান বিচারপতির মতে, “এই মামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিহিংসা। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।”
এই রায়ের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং অন্যান্য আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে।
এ রায় শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, ন্যায়বিচার সর্বদা প্রতিষ্ঠিত হয়।